শনিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

সিলেট বিশ্ব সম্মেলন শুরু

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসরত সিলেটবাসীর আসর বসছে নিউইয়র্কে। শেষ গ্রীষ্মের চমৎকার আবহাওয়ায় পূর্ব পশ্চিমে ছড়িয়ে থাকা সিলেট অঞ্চলের বহু লোক এখন এই নগরে। নগরের প্রবাসী বহুল কুইন্সের জ্যামাইকায় ইয়র্ক কলেজ প্রাঙ্গণে মেলা বসেছে। প্রথমে এ মিলন মেলায় প্রবেশের জন্য পাঁচ ডলারের প্রবেশ মূল্য নির্ধারণ করা হলেও পরে তা উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সবার জন্য উন্মুক্ত এই আয়োজন এবং ব্যবস্থাপনায় রয়েছে নিউইয়র্কের জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন। 
জালালাবাদ সিলেট বিশ্ব সম্মেলনের আয়োজন নিয়ে সন্তুষ্টির কথা জানালেন সংগঠনের সভাপতি বদরুল হোসেন খান। প্রথম আলোকে দেওয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও জালালাবাদ সিলেট বিশ্ব সম্মেলন নিয়ে প্রবাসীদের উৎসাহ আমাদের অনুপ্রাণিত করছে।
বিশ্ব সিলেট সম্মেলননের মূল আহ্বান ‘আয় প্রাণের মাঝে যায়’। সংস্কৃতির অবগাহনে ঐতিহ্যের পুনর্বাসন নিয়ে কথা বলছেন সম্মেলনে আগত বিশিষ্ট লোকজন। আমেরিকার সব অঙ্গরাজ্যসহ বাংলাদেশ, ভারত, কানাডা, যুক্তরাজ্য, জাপান, জার্মানি, মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়া ও অন্যান্য দেশ থেকে অনেকেই অংশগ্রহণ করছেন। 
সম্মেলনে সংগীত, নৃত্য, মিলন মেলা, আত্মকথা, পরিচিতি, শুভেচ্ছা বিনিময়, প্রজন্মের অনুভূতি, শিকড়ের সন্ধানে, সিলেটী খাবার ও অন্যান্য স্টল থাকছে। ঐতিহ্যের এবং সংস্কৃতির অবগাহনে ভরপুর থাকবে পুরো দুই দিনের অনুষ্ঠান। থাকবে প্রস্তাবিত বিভিন্ন বাস্তব প্রকল্প যাতে সিলেট অঞ্চলের ইতিহাস, ঐতিহ্য, ভাষা, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক বিশেষত্বের সংরক্ষণ করা যায়।
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের কোনো বিশেষ অঞ্চল নিয়ে এমন একটি বিশ্ব সম্মেলন রীতিমতো আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এ সম্মেলন নিয়ে প্রায় ছয় মাস ধরে নিরলস কাজ করছেন জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জেড চৌধুরী জুয়েল। প্রথম আলোকে তিনি জানান, দেশ বিদেশ থেকে ব্যাপক আলোড়ন এবং সহযোগিতা পাওয়া গেছে। এ বিশ্ব সম্মেলনের মাধ্যমে সিলেট অঞ্চলের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা নিয়ে সম্মিলিত আওয়াজ উঠবে বলে তিনি প্রত্যাশা করেন। 
সিলেট বিশ্ব সম্মেলনের আহ্বায়ক ড. জিয়াউদ্দিন আহমেদ বলেন, স্থানীয় সময় ১৬ সেপ্টেম্বর সকাল দশটায় সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে। এ সময় বিভিন্ন দেশ থেকে আসা অতিথিদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হবে সম্মেলন কেন্দ্রে। মূল উদ্বোধনী বক্তব্য রাখবেন শনিবার বিকেল চারটায় ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান স্যার ফজলে হাসান আবেদ। এ সময় মঞ্চে থাকবেন মানব জাতির চন্দ্র বিজয়ের অভিযাত্রার সঙ্গে যিনি জড়িত ছিলেন, সেই রফিক উদ্দিন আহমেদ যিনি সিলেটের পাখি মিয়া নামে পরিচিত। 
প্রথমবারের মতো কোনো সমাবেশে উপস্থিত থাকার আগে রফিক উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে জানান, শরীর শেষ পর্যন্ত ঠিক থাকলে মঞ্চে তিনি অ্যাপোলো ১১ অভিযান নিয়ে কথা বলবেন। সবকিছু ঠিক থাকলে, প্রথমবারের মতো কোনো বাংলাদেশির মুখ নিয়ে মানব জাতির চন্দ্র অভিযানে নিজের সম্পৃক্ততার গল্প শুনবেন প্রবাসীরা। 
অন্যান্য বিশিষ্ট অতিথির মধ্যে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান জনাব হাফিজ আহমেদ মজুমদার, প্রাক্তন উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, জাতীয় অধ্যাপক ডা. শায়লা খাতুন, ঢাকা জালালাবাদ সমিতির সভাপতি সি. এম. তোফায়েল সামি, অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ খলিকুজ্জামান, মেজর জেনারেল (অব.) আজিজুর রহমান বীর উত্তম, জাতিসংঘে বাংলাদেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত ড. আব্দুল মোমেন, অধ্যাপক ড. সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম, গ্রিন ডেল্টা প্রধান নাসির, এ চৌধুরী, প্রাক্তন উপদেষ্টা এনাম আহমেদ চৌধুরী, ব্র্যাক এর ভাইস চেয়ারম্যান ড. আহমেদ মুশতাকুর রাজা চৌধুরী, বেসরকারি সাহায্যসংস্থা এফআইডিভিপি প্রধান যেহীন আহমেদ, বেসরকারি সাহায্যসংস্থা সীমান্তিক প্রধান ড. আহমেদ আল কবীর, কর্নেল (অব.) আব্দুস সালাম বীর প্রতীক, চা ব্যবসায়ী ও সমাজকর্মী সাফফান চৌধুরী, সিলেটের মেয়র আরিফ চৌধুরী, সিলেটের বিভিন্ন জেলার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, নতুন প্রজন্মের আন্তর্জাতিক নারী ব্যক্তিত্ব ফারহানা চৌধুরীসহ অন্যান্যদের উপস্থিতির কথা জানানো হয়েছে।
সম্মেলনের সাংগঠনিক কাজে নিত্য ব্যস্ত অধ্যাপিকা রানা ফেরদৌস চৌধুরী প্রথম আলোকে জানালেন, ভারত থেকে সিলেট বিশ্ব সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন দক্ষিণ কলকাতা সিলেট অ্যাসোসিয়েশন, মুম্বাই এর সিলেটী সম্মেলনী, আল ইন্ডিয়া ফেডারেশন অব সিলেট সম্মিলনীর নেতৃবৃন্দ, দৈনিক যুগ শঙ্খ পত্রিকার কর্ণধার ও সম্পাদক বিজয় কৃষ্ণ নাথ, গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার প্রধান ড. অমলেন্দু চক্রবর্তীসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তিনি জানান, বিশ্ব সম্মেলন উপলক্ষে একটি সমৃদ্ধ স্মরণিকা থাকছে। এ ছাড়া সিলেট বিশ্ব সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বিশেষ সংখ্যা সাজানোর জন্য তিনি প্রথম আলোকে ধন্যবাদ জানান। 
বিশ্ব সম্মেলনের সদস্যসচিব মিজানুর রহমান সেফজ জানালেন, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জাপান ও জার্মানি থেকে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এর মধ্যেই নিউইয়র্কে এসে পৌঁছেছেন। নতুন প্রজন্মের বক্তা সাবিরুল ইসলামের বক্তব্য সম্মেলন কেন্দ্রে নতুন প্রজন্মের প্রবাসীদের অন্যতম আকর্ষণ বলে তিনি উল্লেখ করেন। 
সিলেট বিশ্ব সম্মেলনের মঞ্চে দুই দিন ব্যাপী থাকছে অনেক সেমিনার, আলোচনা। সম্মেলনের শেষ দিন রোববার বিকেল ছয়টায় ‘দেশে প্রবাসে বাংলা সাংবাদিকতা’ শীর্ষক আলোচনা হবে। এ পর্বের সভাপতি মাহবুবুর রহমান জানালেন, প্রবাসে বাংলা সংবাদ পত্রের প্রসারে সিলেট অঞ্চলের প্রবাসীরা যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন, তা নিয়ে আলোচনা হবে সেমিনারে। 
সুবীর নন্দী, শুভ্র দেব, জামালউদ্দিন হাসান বান্না, ডা. অরুপ রতন চৌধুরী, নীলাঞ্জনা জুঁইয়ের নৃত্যদল ‘নৃত্য শৈলী’, শামীম আহমেদ, হিমাংশু বিশ্বাস, হিমাংশু গোস্বামী, গৌরী চৌধুরী, শহীদ বাউল, দুলাল ভৌমিক, তাজুল ইমাম, কাবেরী দাশ, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সাবু শাহ, প্রখ্যাত নৃত্য শিল্পী সোনালী আচার্জি, কায়া ব্যান্ড সহ থাকছে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শাকুর মজিদ রচিত ও পরিচালিত পরিবেশনা ‘শত বছরের সিলেটের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য’।
সিলেট থেকে সম্মেলনে এসেছেন আনোয়ার হোসেন রণি, আব্দুল করিম কিম, মোস্তফা সেলিম।

শেয়ার করুন

0 Comments: